নিশীথিনী, মিসির আলী সিরিজের দ্বিতীয় বই, দেবী উপন্যাসের দ্বিতীয় পর্ব।
নিশীথিনীর গল্প নতুন চরিত্র ফিরোজকে নিয়ে। সে ডাক্তারী পড়াশোনা করে। ময়মনসিংহের মোহনগঞ্জে তার বন্ধু আজমলের বাড়ী। ফিরোজ সেখানে ঘুরতে যায়। সেখানে গিয়ে সে এমন কিছু দেখে তাতে পুরোপুরি অস্বাভাবিক হয়ে যায়। তাকে ঢাকা নিয়ে আসা হয়। তারপর থেকেই হঠাৎ হঠাৎ সে হিংস্র হয়ে পড়ে। তার মাথায় খুন চেপে যায়। হিংস্র অবস্থায় তার কাছে একটি মানুষ আসে, তার সাথে কথা বলে। মিসির আলি ফিরোজের এ রহস্য উদ্ঘাটনের ভার নেন। ফিরোজ যার সাথে কথা বলে, মিসির আলির দেওয়া টেপ রেকর্ডারে তার আওয়াজও ধরা পড়ে। ফিরোজের সাথে কথা বলা এ অস্তিত্বটি হলো মোহনগঞ্জের ছোট চৌধুরী। তিনি হলেন আজমলের দাদার বাবা।
দেবী উপন্যাসের নীলুকে এই উপন্যাসেও দেখা যায়। তবে আশ্চর্যজনক তথ্য হলো, নীলুও রানুর মতো আচরণ করছে। তার মাঝেও অতিপ্রাকৃত ব্যাপারটা ভর করছে আর সেও ঠিক রানুর মতো বিভিন্ন অস্তিত্ব টের পায়। যে কোন বিপদের সময় সে আগে থেকেই সব জানতে পারে।
মিসির আলির বাড়ির কাজের মেয়ে হানিফা হঠাৎ রাতে ঘুমের ঘোরে ইংরেজি বলে উঠে। মিসির আলি বুঝতে পারেন। এ মেয়ে বেশ ভালো শিক্ষিত ঘরের। তখন তার মা বাবার খোঁজে তার কমিশনার বন্ধুর সাহায্য চান। সে সময় হঠাৎ করেই ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় এক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। তা হলো শুধু মাত্র প্যান্ট পড়া যুবক, তার হাতে রড এবং সে এই রড দিয়ে মানুষকে খুন করে বেড়ায়। রাজধানীতে যখন একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটাতে থাকে, তখন নীলু হঠাৎ বুঝতে পারে এবার মিসির আলির পালা। সেই আততায়ী এবার মিসির আলিকে পাকড়াও করবে। নীলু যায় মিসির কাছে। প্রচণ্ড যুক্তিবাদী মিসির আলী কি কখনও এসব সমর্থন করবেন? তিনি কি পারবেন ফিরোজের ভেতরকার রহস্য, নীলুর রহস্য ভেদ করতে।
মিসির আলিরকে ঘিরে নীলু আর ফিরোজ। তাদের মধ্যকার দুই অস্তিত্ব দেবী আর ছোট চৌধুরী। যাদের অস্তিত্ব মিসির আলীর কাছে নেই, সত্যিই কি নেই?
দেবী থেকে অনেকগুন বেশি ভৌতিক লাগে নিশীথিনী। এখানে দুই চরিত্রের দুই অস্তিত্ব সত্যিই বেশ ভয় লাগে। লেখক বেশ সহজ সরল বর্ণনার মধ্যে দিয়ে ভৌতিক একটা আবহের সৃষ্টি করেছেন। যেখানে চোখ খুলে তাকাতেও পারছিলাম না, আবার অতি আগ্রহের ফলে বন্ধও রাখতে পারছিলাম না। পড়ার পরও ভয়ের চিত্র গুলো মাথা থেকে মুছে যায় না, বিশেষ করে ফিরোজের আচরণ। যতবার বইটার কথা মনে হয়। ততবার ওই চিত্র। আর ততবার চমকে যাই।
মিসির আলি এই ভয়ের রহস্য ভেদ করেছেন আরো বেশি চমৎকার ভাবে। আলো আঁধারিতে পড়ার জন্য অসম্ভব একটা বই। হুমায়ুন আহমেদের সৃষ্ট চরিত্র মিসির আলি বেশ রহস্যময়। দেবী উপন্যাসের মধ্যদিয়ে তার আগমন। লেখক এই চরিত্রটাকে গড়ে তুলেছেন লজিক দিয়ে। মিসির আলি সম্পর্কিত কাহিনীগুলো থাকে প্রচণ্ড যুক্তি নির্ভর। আর এই যুক্তি দিয়ে ভেদ করেন রহস্যের ভূতুরে দেয়াল। চারপাশের রহস্যময় কাহিনীগুলোকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে খুব সহজ ভাবে তুলে ধরেন। যেমনটা হয়েছে নিশীথিনীতে।